Entries have opened for the 2026 Commonwealth Short Story Prize Read more

দুশ্চিন্তা না করে নিজের গল্পের অনুবাদকে ভালোবাসা যায়

Arunava Sinha explains how he captures the meaning, rhythm and emotion of a story in a new language.

Posted on 23/09/2025
By Arunava Sinha

প্রিয় লেখক, নিজের পছন্দের ভাষায় গল্প লিখেছেন আপনি। হয়তো আপনার জীবনযাপনেরই ভাষা এটা। এবার সেই গল্প অন্য ভাষায় অনূদিত হতে চলেছে—এমন একটা ভাষায় যার সঙ্গে আপনার নিজের জবানের মিল খুবই কম। উৎস আলাদা, বাক্য গঠনে পার্থক্য অনেক, লয় অন্য রকম, কাঠামোয় বিস্তর ফারাক।  

তারপর ভাবতে  হবে অনূদিত গল্পের পাঠকের কথা। তিনি নিশ্চয়ই পৃথিবীর অন্য কোনো প্রান্তের মানুষ। যে অবগতি ও অভিজ্ঞতা আপনি ধরে নেন আপনার গল্পের মূল পাঠকের আছে, সেগুলোর সঙ্গে অনূদিত গল্পের পাঠকের পরিচয় না থাকাই স্বাভাবিক। আপনার লেখা শব্দ বাক্য পরিচ্ছেদ যতই যত্ন সহকারে অনুবাদ করা হোক না কেন, যেগুলো অনভিব্যক্ত ও অন্তর্নিহিত, সেগুলো কি অনুবাদে প্রস্ফুটিত হবে? দুশ্চিন্তা তো থাকবেই।

অনুবাদক হিসেবে আপনার এই দুশ্চিন্তা আমি বিলক্ষণ বুঝতে পারি। আমার নিজেরও কিছু উদ্বেগ আছে। ধরুন যখন বাংলা থেকে ইংরেজিতে গল্প অনুবাদ করছি, আমার চিন্তার কারণ এটাই—বাংলা ভাষায় আমিও বাস করি, শুধু যে পড়ি বা লিখি তা তো নয়। তাহলে এই ভাষায় লেখা গল্পে যা যা আছে, স্পষ্ট হোক বা সূক্ষ্ম, অনুবাদে সমস্ত কিছু ধরে করতে পারবো তো? তাছাড়া, আমি যে ইংরেজিটা ব্যবহার করব, অনূদিত গল্পের পাঠক যদি সেই ধরণের ইংরেজি পড়তে অভ্যস্ত না হন?

দেখুন, বাংলা শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ খুঁজে বের করাটা আসল সমস্যা নয়। অবশ্যই প্রত্যেকবার যথাযথ প্রতিশব্দ সহজে পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে শব্দ বা শব্দগুচ্ছকে বিস্তৃত করতে হতে পারে, অথবা পরিপ্রেক্ষির মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া যেতে পারে। বলা যায় কথার অর্থটা চুপিচুপি যোগ করা হচ্ছে, কিন্তু সুর তাল বজায় রেখে, যাতে মনে না হয় মূল পাঠে গজাল দিয়ে পাদটীকা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কোনো কোনো অনুবাদক আবার সেই বিশেষ শব্দ বা শব্দগুচ্ছগুলোকে অনুবাদ না করে মূল ভাষাতেই রেখে দেন, যাতে পাঠক বুঝতে পারেন যে এগুলো অনূদিত ভাষা দিয়ে যে সব অভিজ্ঞতা এবং অনুভব প্রকাশ করা যায় সেগুলোর বাইরে। কিন্তু দেখতে হবে যে পাঠক এবং এই অপরিচিত ধারণার মধ্যে যে দূরত্ব, তা যেন গল্পটা পড়ার আনন্দকে বিনষ্ট না করে।

অনুবাদ করার সময় আমার প্রথম কাজ গল্পে ভাষা যেভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে এবং সেই ভাষা সাধারণত যে ভাবে ব্যবহার করা হয়, এই দুটির মধ্যে কী সম্পর্ক সেটা উপলব্ধি করা। মূল ভাষা সচরাচর যে ভাবে ব্যবহার করা হয় গল্পে কি সে ভাবেই  হয়েছে? নাকি এর প্রয়োগে কোনো বিশেষত্ব আছে? আমার লক্ষ্য থাকে অনূদিত গল্পেও একই সম্পর্ক বজায় রাখার দিকে।  এই সম্পর্ক পাল্টে গেলে কিন্তু গল্প থেকে অনেক কিছু হারানোর ভয় থাকে।

এরপর দেখতে হবে, মূল গল্পটি পড়ার অভিজ্ঞতা কেমন? পাঠক কি তরতর করে এগিয়ে যেতে পারেন? নাকি থেমে থেমে, একটু ভেবে ভেবে পড়তে হয়? আমি চেষ্টা করি পাঠকের অভিজ্ঞতা একই রকম রাখতে।  

অবশেষে বলি, গল্পকে নতুন ভাষায় রূপান্তরিত করার আগে অনুবাদক সেটি কীভাবে পড়ছেন, সেটাও অত্যন্ত জরুরি বিষয়। এটা বেশ গণ্ডগোলের ব্যাপার। আমার নিজের পদ্ধতি হলো আখ্যানটিকে কেবল একটি দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখা। যদি মূল গল্প একাধিক ভাবে পড়ার সুযোগ থাকে—উৎকৃষ্ট সাহিত্যে যে রকম হয়ে থাক—অনুবাদও যেন একাধিক ভাবেই পড়া যায়। অনুবাদের উদ্দেশ্য সম্ভাবনাগুলোকে সংকুচিত করার বদলে সংরক্ষণ করা, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রসারিতও করা।

আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো অনুবাদটি যেন এই ধরনের ভ্রম না সৃষ্টি করে যে গল্পটি অনূদিত ভাষাতেই প্রথম লেখা হয়েছিল। তার মানে এই নয় যে পাঠককে এটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমি অনূদিত ভাষাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করি। একেকটি ভাষার একেক রকম স্বর, যেগুলো দিয়ে লেখক মৌলিক সংগীত তৈরী করেন। অনুবাদ অনেকটা সেই একই সুরগুলোকে অন্য বাদ্যযন্ত্রে বাজানোর মতো, যা কিনা এই নতুন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো মেনে চলে। বাঁশিতে তো সরোদ বাজানো যায়না—সুর এক হলেও কিছু পার্থক্য থাকবেই।

প্রিয় লেখক, আপনার চেয়ে ভালো করে আর কে জানেন যে আপনার গল্প শুধুমাত্র শব্দের অভিধানগত অর্থে বেঁচে থাকে না, থাকে প্রধানত এই সব অন্যান্য উপাদানে। অনূদিত গল্প হুবহু আপনার গল্প হবে না ঠিকই, কারণ ভাষা দুটোর বৈশিষ্ট যে আলাদা। কিন্তু অনুবাদের মাধ্যমে গল্প যে নতুন জীবন পাবে তা আপনি তাকে যে জীবন দিয়েছেন তার মতোই প্রাণবন্ত হবে। শুধু অনুবাদকের উপর একটু আস্থা রাখতে হবে, এই যা। 


অনুবাদ: অরুণাভ সিংহ

গল্প নেওয়া হচ্ছে

কমনওয়েলথ শর্ট স্টোরি প্রাইজের জন্য ১ নভেম্বর অবধি গল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রতিযোগিতায় বাংলা গল্প জমা দেওয়া যাবে। বিনামূল্যে গল্প জমা দিন এখানে।